নিত্যদিনের ব্যস্ততায় অতিরিক্ত গরম আমাদের অনেক সময়েই অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। রাস্তাঘাটে বের হলেই যেন ঘাম, ধুলা আর গরমে হাঁসফাঁস করতে হয়। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এই গরমে থাকা যায় স্বস্তিতে। কীভাবে? এর উত্তর লুকিয়ে আছে আমাদের প্রতিদিনের পোশাক, রুটিন আর ছোট ছোট অভ্যাসে।
এই ব্লগে আমরা জানবো গরমে কী পরবেন এবং অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচার ৫টি সহজ উপায়, যেগুলো আপনাকে দেবে আরাম, স্বস্তি আর ফ্যাশনের ছোঁয়া একসাথে।
১. হালকা ও শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য ফেব্রিক বেছে নিন
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এমন ফেব্রিক বেছে নেওয়া, যা বাতাস চলাচল করতে দেয় এবং শরীরে ঘাম জমতে দেয় না। এই ধরনের ফেব্রিককে বলে শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য বা breathable ফেব্রিক। কটন (Cotton), লিনেন (Linen), রেয়ন (Rayon) এবং ভিসকোস (Viscose) এই ফেব্রিকগুলো গরমে পরার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। কারণ এগুলো হালকা, নরম এবং ঘাম শোষণ করে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। বিপরীতে ভারী বা সিনথেটিক ফেব্রিক যেমন পলিয়েস্টার বা নাইলন শরীরের তাপ আটকে রাখে এবং অস্বস্তিকর অনুভূতি তৈরি করে।
টিপস:
- দিনের বেলা বাইরে বের হলে কটন বা লিনেনের ঢিলেঢালা টি–শার্ট, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ, গাউন বেছে নিন
- অফিস বা ইনডোর ইভেন্টের জন্য রেয়ন বা ভিসকোসের স্টাইলিশ শার্ট, পোলো, টিউনিক, টপ বটম সেট, জাম্প সুট বেছে নিতে পারেন
- সম্ভব হলে ১০০ শতাংশ কটন ফেব্রিক পরার চেষ্টা করুন
গরমে স্বস্তি পেতে হলে সবার আগে গুরুত্ব দিন ফেব্রিকে। সঠিক ফেব্রিক আপনাকে দেবে আরাম ও স্টাইল একসাথে।
২. উজ্জ্বল ও হালকা রঙের পোশাক পরার চেষ্টা করুন
গরমে পোশাকের রঙও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাঢ় রঙের পোশাক, বিশেষ করে কালো, নেভি ব্লু বা ডার্ক গ্রে রঙ সূর্যের আলো বেশি শোষণ করে। ফলে শরীর আরও গরম হয়ে যায় এবং অস্বস্তি বাড়ে। অন্যদিকে হালকা ও উজ্জ্বল রঙ যেমন সাদা, অফ হোয়াইট, হালকা গোলাপি, মিন্ট, প্যাস্টেল ইয়েলো বা হালকা নীল রঙ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে, ফলে শরীর তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে।
টিপস:
- দিনের বেলার জন্য সাদা, লাইট পিংক, সি-গ্রিন বা স্কাই ব্লু পোশাক বেছে নিতে পারেন
- হালকা রঙের সাথে মিক্স করা ফ্লোরাল বা ছোট মোটিফ ডিজাইন স্টাইলেও ভিন্নতা আনে
- হালকা রঙ শুধু গরম কমায় না, বরং আপনাকে আরও ফ্রেশ ও পরিপাটি দেখায়
অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচতে শুধু ফেব্রিক নয়, রঙ নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। তাই এবার গরমে আপনার পোশাকে থাকুক হালকা রঙের পরশ, যা আপনাকে রাখবে ঠান্ডা এবং স্টাইলিশ।
৩. ঢিলেঢালা কাটের স্টাইল বেছে নিন, টাইট পোশাক নয়
গরমকালে টাইট পোশাক শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে বলে বাতাস চলাচল করতে পারে না। এতে শরীরে তাপ জমে যায়, ঘাম বাড়ে এবং অনেক সময় স্কিনে র্যাশ বা চুলকানিও হতে পারে। তাই গরমে ঢিলেঢালা, ফ্লোই কাটের পোশাক পরাই সবচেয়ে আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর।
যেমন ধরুন, ঢিলেঢালা টপস, টিউনিক, শার্ট ড্রেস, পালাজ্জো, আড়কাটি কামিজ বা ম্যাক্সি ড্রেস, এগুলো শুধু আরামই দেয় না, বরং দেখতে ফ্যাশনেবলও লাগে। এমনকি পুরুষদের জন্যও লুজ ফিটের কটন পাঞ্জাবি বা শর্ট স্লিভ শার্ট গরমে বেশ স্বস্তিদায়ক।
টিপস:
- খুব টাইট জিন্স বা লেগিংসের বদলে পালাজ্জো বা লুজ প্যান্ট পাজামা পরুন
- ভারী এমব্রয়ডারি বা অতিরিক্ত লেয়ারযুক্ত পোশাক গরমে এড়িয়ে চলুন
- লুজ কাটের পোশাক শরীর ঢেকে রাখে, আবার ঘামও কমায়
গরমে ফ্যাশনের সঙ্গে স্বস্তিও চাইলে ঢিলেঢালা কাটই সবচেয়ে ভালো সমাধান। এমন পোশাক দিনভর পরে থাকলেও শরীরে চাপ পড়ে না এবং আপনি নিজেকে অনেক হালকা ও রিল্যাক্সড অনুভব করবেন।
৪. সানপ্রটেকশন অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করুন
রোদে ঘর থেকে বের হওয়া মানেই শুধু গরম নয় বরং ত্বকের জন্য ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মিরও (UV rays) মুখোমুখি হওয়া। এসব থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হলে শুধু হালকা পোশাকই যথেষ্ট নয়, দরকার সানপ্রটেকশন অ্যাকসেসরিজ।
বাইরে বের হওয়ার সময় সানগ্লাস, হ্যাট, স্কার্ফ, ক্যাপ, ছাতা, বা স্টোল ব্যবহার করলে মুখ, চোখ ও চুল অনেকটাই সুরক্ষিত থাকে। সানগ্লাস চোখকে UV রশ্মি থেকে রক্ষা করে, হ্যাট বা ক্যাপ মাথাকে ঠান্ডা রাখে আর স্কার্ফ বা স্টোল মুখ ও ঘাড় ঢেকে রাখে যাতে সরাসরি রোদ না লাগে।
এছাড়া, যারা বাইক চালান বা রিকশায় বসে অনেক সময় চলাফেরা করেন, তাদের জন্য ফুল ফেস মাস্ক বা সান প্রোটেকশন হাত মোজা দারুণ কার্যকর।
টিপস:
- সূর্যের তীব্রতা বেশি হলে হ্যাট বা ক্যাপ ব্যবহার করুন
- স্টাইল বজায় রাখতে সানগ্লাস বেছে নিন আপনার মুখের শেপ অনুযায়ী
- স্কার্ফ বা স্টোল শুধু রোদ থেকে নয়, ধুলা থেকেও সুরক্ষা দেয়
- বাইরে যাওয়ার আগে মুখে ও হাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করাও ভালো অভ্যাস
গরমে নিজেকে আরামদায়ক রাখতে পোশাক যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সানপ্রটেকশন অ্যাকসেসরিজও অত্যন্ত জরুরি। এসব ছোট ছোট জিনিস আপনাকে রোদে পুড়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং দিনে দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলেও স্বস্তি দেবে।
৫. বাইরের তাপ এড়াতে সময় ও জোন বাছাই করুন
গরমে আরাম পেতে শুধু কী পরছেন তা নয়, কখন এবং কোথায় যাচ্ছেন সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। দিনের কিছু সময় থাকে যখন সূর্যের তাপমাত্রা চরম পর্যায়ে থাকে, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এই সময় রাস্তায় বের হওয়া শরীরের উপর বাড়তি চাপ ফেলে, ঘাম ও পানিশূন্যতার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। তাই চেষ্টা করুন খুব প্রয়োজন না হলে এই সময়টায় বাইরে না যেতে। যদি যেতেই হয়, তাহলে ছায়াযুক্ত পথ বেছে নিন বা যতটা সম্ভব গাছপালা ঘেরা এলাকা দিয়ে চলাচল করুন।
রোদ এড়াতে ছাতা ব্যবহার করুন এবং চলাফেরার সময় মাথা ও গলা ঢেকে রাখুন। হাঁটার সময় রোদ থেকে বাঁচতে রাস্তার এমন পাশ ধরুন যেখানে ছায়া পড়ে। এছাড়া, যাতায়াতে সময় ঠিক করার ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা জরুরি। সকালে বের হওয়া বা বিকেলের পর কাজ রাখা তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক।
টিপস:
- দুপুরের গরম এড়াতে দৈনিক কাজগুলো সকালে বা বিকেলে সেরে ফেলুন
- হাইড্রেটেড থাকতে সঙ্গে পানি রাখুন
- ট্রাফিক জোন বা ধুলাবালি বেশি এমন রাস্তা এড়িয়ে চলুন
- ছায়াযুক্ত বা কম ভিড়ের পথ বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন
গরমে শুধু সঠিক পোশাক নয়, বাইরে যাওয়ার সময় ও স্থান বেছে নিলেও আপনি নিজেকে অনেকটাই স্বস্তিতে রাখতে পারবেন।
গরমে আরাম ও স্টাইল দুটোই সম্ভব, শুধু সঠিক পোশাক ও অভ্যাস বেছে নিতে হবে। হালকা ও শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য ফেব্রিক, উজ্জ্বল রঙ, ঢিলেঢালা কাটের পোশাক এবং প্রয়োজনীয় সানপ্রটেকশন অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করলে গরমের চাপ অনেক কমে যায়। পাশাপাশি বাইরে বের হওয়ার সময় ও স্থানও সচেতনভাবে বেছে নিলে অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচা সহজ হয়। আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরামদায়ক ও প্রাণবন্ত করে তুলতে আজই এই সহজ অভ্যাসগুলো শুরু করুন।
- ফাতেমাতুজ্জোহরা আফিয়া